গুপ্তচর ডেস্ক:
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।সেই নির্বাচনের সময় শিবপুরের রাজনীতির অঙ্গনে হঠাৎ করেই আবির্ভাব ঘটে সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ওরফে ডলার সিরাজের।কথিত আছে ডলার ব্যবসা করে তিনি কোটি কোটি টাকা বানিয়েছেন।তাই ডলার সিরাজ হিসেবেই তিনি পরিচিত।মূলত তিনি একজন ব্যবসায়ী মানুষ।রাজনীতিতে আগমনের সময় তার পরিবারের কারো আওয়ামী লীগের সদস্য পদও ছিল না।তা সত্ত্বেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
আওয়ামী লীগ জহিরুল হক মোহনকে নৌকার মনোনয়ন দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন ডলার সিরাজ।কোটি কোটি টাকা খরচ করে তিনি নৌকার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের পকেটে নিয়ে নেন।স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি জয়লাভ করেন ওই নির্বাচনে।নির্বাচনের পর মোহন আক্ষেপ করে বলেছিলেন শিবপুরে নৌকা পরাজিত হয়নি টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শিবপুরে বিএনপির প্রার্থী হন আরেক ব্যবসায়ী নেতা মনজুর এলাহী।তখনও নৌকার প্রার্থী ছিলেন মোহন।কিন্তু আবারও ডলার সিরাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন।উদ্দেশ্য স্পষ্ট নৌকা ডুবানো।নৌকার ভোট ভাগাভাগি এমপি হবেন মনজুর এলাহী।নির্বাচনের হিসাব -নিকাশ ছিল এই।কিন্তু বিধি বাম।আদালত মনজুর এলাহির প্রার্থিতা বাতিল করলে আবারো মোহন ও ডলার সিরাজের মধ্যে খেলা শুরু হয়।নির্বাচনের দিন ডলার সিরাজের উপস্থিতিতে তার সমর্থকদের হাতে নৌকার একজন এজেন্ট নিশংসভাবে খুন হন।ফলে নির্বাচনের গুটি ঘুরে যায়।একথা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।ফলে শিবপুরের মানুষ নৌকাকে বেছে নেয়।নৌকা নিয়ে জয়লাভ করে মোহন।নৌকা ডুবাতে যেয়ে নিজেই ডুবে যান ডলার সিরাজ।নির্বাচনের পর ডলার সিরাজ সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের হয়।শেখ মুজিবুরের ৪৮ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে এক আলোচনা সভায় বাঘাব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদ সরকার অভিযোগ করেন, বাদীকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে নিজের নাম মামলা থেকে বাদ দিয়েছেন ডলার সিরাজ।শিবপুরবাসি জানে এই খুনের সাথে কে জড়িত!তিনি টাকার অহংকারে, আগামী দিনে ১০টি মার্ডার করে হলেও নির্বাচন করবেন।তিনি একজন মাফিয়া ডন!কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হল সেই জাহিদ চেয়ারম্যান এবার ডলার সিরাজের পক্ষেই মাঠে নেমেছেন।
দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে শিবপুর আওয়ামী লীগকে যিনি সুসংগঠিত করে রেখেছিলেন ,শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খাঁন ওরফে হারুন খাঁকে চলতি বছরে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।এই হত্যাকান্ডের সন্দেহের তীর উঠে সাবেক এমপি মোহনের দিকে।কিন্তু সেই খাঁন পরিবার থেকেই সাবেক সংসদ কিরণ খাঁনের সুযোগ্য সন্তান রাব্বি খাঁন যখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নৌকার টিকেট আনেন,এবারও নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন ডলার সিরাজ।শিবপুরের ঐতিহ্যবাহী এই খাঁন পরিবারের সাথে ডলার সিরাজের সু -সম্পর্ক ছিল।কিন্তু এমপি হওয়ার খায়েসে,ক্ষমতার লোভে, টাকার গরমে, খাঁন পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি।এই সিদ্ধান্ত শিবপুরবাসীকে হতবাক করেছে।আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা এটা ভালোভাবে নিচ্ছেন না।
রাব্বি খাঁন এখন প্রকাশ্যেই বলছেন তার চাচা হারুন খাঁ হত্যাকান্ডে হাত রয়েছে ডলার সিরাজের।প্রকৃত আসামিরা বিদেশ পাড়ি দেওয়ায় এই হত্যাকান্ড এখনো রহস্যঘেরা।শুধু তাই নয় তার মূল উদ্দেশ্য শিবপুর আওয়ামীলীগকে ধ্বংস করা।তাই সারা জীবন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন।
বর্তমানে ডলার সিরাজ নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।অনেকেই মনে করেছিলেন টাকা দিয়ে তিনি মনোনয়ন নিয়ে আসবেন এবার।কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।টানা তৃতীয়বার তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে কেন ব্যর্থ হলেন?
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়,অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচার মামলায় ভারতের কারাগারে বন্দী পি কে হালদারের সাথে ডলার সিরাজের গোপন ব্যবসা রয়েছে।সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ উঠে এই পি কে হালদারের বিরুদ্ধে।দুদক পি কে হালদারও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।মূলত এই কারণেই তার উপরে ভরসা করতে পারেননি আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।জীবনে কোনদিনই তিনি নৌকার টিকেট পাবেন না বলে জানায় এই সূত্রটি।তাই বাধ্য হয়েই তাকে সারা জীবন শুধু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে হবে।
শিবপুরের ঐতিহ্যবাহী খাঁন পরিবারে নৌকার মনোনয়ন যাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।তাই এই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারবেন না ডলার সিরাজ এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তারা।ইতিমধ্যে সকল মহলে রাব্বি নিজেকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন এবং শিবপুরে আওয়ামী লীগ তাকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ।তাই এবার রাব্বির নৌকা ডুবাতে যেয়ে ডলার সিরাজের বাজপাখি নৌকার নিচে পড়ে পানিতে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
Leave a Reply