 
							
							 
                    
গুপ্তচর প্রতিবেদক : বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি স্মরণীয় হয়ে আছে ‘ওয়ান-ইলেভেন’ নামে পরিচিত একটি নাটকীয় পরিবর্তনের জন্য। ওই সময় দেশে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা এবং সেনাসমর্থিত একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। ওই সরকার শুরু করে রাজনৈতিক সংস্কারের নামে একটি আলোচিত পরিকল্পনা— ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’, যার লক্ষ্য ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভেতরে গড়ে ওঠে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী। দলটির তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একদল নেতা নিজেদের ‘জিয়ার আদর্শের সৈনিক’ দাবি করে দলের হাল ধরতে চায়। কিন্তু তারা সফল হয়নি। তখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল( অব.) আ স ম হান্নান শাহ ও বিএনপির সাবেক মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মত বিশ্বস্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা সেই ষড়যন্ত্র রুখে দেয়। বেলাবো মনোহরদীর আগামী দিনে মনোনয়ন প্রত্যাশী স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল এই সময় দলের পক্ষে, জিয়া পরিবারের পক্ষে জোরালো ভুমিকা রাখেন। পরবর্তীতে এই ভূমিকার কারণে মান্নান ভূঁইয়া দল থেকে বহিষ্কৃত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বহিষ্কৃতই থাকেন।
তবে দলের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হন বেলাবো-মনোহরদীর সাবেক সংসদ সদস্য সর্দার শাখাওয়াত হোসেন বকুল। ওয়ান ইলেভেনের সময় তিনি টেলিভিশনের টকশোতে একের পর এক কুৎসিত মন্তব্য করেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সম্পর্কে। তার ভাষ্য ছিল, “খালেদা জিয়া নষ্ট মহিলা, আর তারেক রহমান নষ্ট মায়ের নষ্ট সন্তান”—এই রকম ধৃষ্টতাপূর্ণ ভাষা ব্যবহারে গোটা দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
বিস্ময়ের বিষয়, এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবারো বিএনপি মনোনয়ন দেয় বেলাবো-মনোহরদী আসন থেকে। মনোনয়নপ্রাপ্তির পিছনে বড় অংকের অর্থ লেনদেন ও প্রভাবশালী মহলের মদদ ছিল বলে গুঞ্জন ওঠে। যদিও বকুল নির্বাচনে প্রার্থী হলেও মাঠে কার্যত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারেননি। কারণ, প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মাজীদ মাহমুদ হুমায়ুন তার আপন মামাতো ভাই। ভোটারদের অভিযোগ, বকুল মূলত আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন, বিএনপিকে দুর্বল করে দিয়েছেন।
বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বকুল বর্তমানে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ এক ধরনের বিটিম নেতা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। একদিকে ধানের শীষের নাম ব্যবহার করে দলীয় কর্মীদের দমন করছেন, অন্যদিকে নৌকার লোকদের সঙ্গে এক হয়ে মাঠে দাপট দেখাচ্ছেন।
সম্প্রতি এই বিষয়ে নরসিংদী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার আবারো তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সেই ঘটনা বিএনপি নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেন এবং মন্তব্য করেন, “বকুল বিএনপির কেউ না ।” তার বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে এবং তৃণমূল বিএনপির মধ্যে নতুন করে বকুল-বিরোধী সুর চড়া হয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা হাই কমান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, আগামী দিনে যেন বকুলের মতো দালাল ও বিশ্বাসঘাতকরা বিএনপির প্রতীকের মাধ্যমে রাজনীতি করার সুযোগ না পায়।
তাদের একটাই দাবি— ‘বিএনপিকে রক্ষা করতে হলে বিশ্বাসঘাতকদের বর্জন করো।’
Leave a Reply