গুপ্তচর প্রতিবেদক :
নরসিংদী জেলার রায়পুরা রোড এলাকায় অবস্থিত কথিত “ফুল বাগান দরবার শরীফ” নামক মাজারটি নিয়ে স্থানীয় জনগণের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, উক্ত স্থানটি প্রকৃতপক্ষে কোনো ধর্মীয় তীর্থস্থান নয়; বরং এটি একটি ভুয়া মাজার, যার প্রতিষ্ঠাতা জনৈক মাসুম শাহ (পিতা: মৃত চান মিয়া শাহ)। তিনি শিবপুর থানার বহুল আলোচিত জোড়া খুন মামলা (মামলা নং ১০/০৮/২০২১) এর দণ্ডিত আসামি, যিনি পিবিআই-এর তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিন বছর কারাভোগের পর জামিন পেয়েছেন। শিবপুর উপজেলার কামারটেক নামক স্থানে ঢাকা সিলেট মহাসড়কে উত্তর বাখাননগর ইউনিয়নের বিএনপির মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহান শাহ আলম বিপ্লব ও তার বন্ধু জেলা বিএনপির ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক মনির হোসেনকে মোটরসাইকেলে চাপা দিয়ে নিশংস ভাবে হত্যা করে বেলাবো উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুম শাহ ও তার গ্যাংরা।
স্থানীয় সূত্রমতে, সেই সন্ত্রাসী মাসুম শাহ তার পিতার মৃত্যুর পর তার নাম ব্যবহার করে বারৈচা ৯নং ওয়ার্ডে এই ভুয়া মাজার প্রতিষ্ঠা করেন, যদিও বাস্তবে তার বাবার লাশ সেখানে দাফন করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, মৃত চান মিয়া শাহকে বারৈচা ৮নং ওয়ার্ডের পুরাতন বাড়িতে দাফন করা হয়, যেখানে আরও একটি মাজার স্থাপন করা হয়েছে। ফলে এই তথাকথিত দরবার শরীফের ভিত্তিই প্রশ্নবিদ্ধ।
প্রতি বছর ১০ ও ১১ জানুয়ারি এখানে “ওরশ” আয়োজন করা হয়, যেখানে নাচ-গান, বাদ্য-বাজনা এবং বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় মসজিদের মুসল্লি, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা জানান, এই আয়োজনের ফলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, যুবসমাজ নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। বিশেষ করে, মাদক সেবন, নারী সংক্রান্ত অনৈতিক কার্যকলাপ ও উচ্ছৃঙ্খলতার অভিযোগ উঠেছে, যা রাষ্ট্রীয় আইন পরিপন্থী। মাজারের খানকার ভিতর প্রতিদিনই অসামাজিক কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবারে বসে মাসুম শাহ গেংদের মাদক সেবনের আসর এবং গোপন মিশন। সন্ত্রাসী মাসুম শাহ জেলখানা থেকে জামিন পেয়ে তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানা যায়।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মনে করেন, এই ওরশ এবং মাজারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দুষ্কৃতকারীরা নির্বাচনে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যা স্থানীয় শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য হুমকি স্বরূপ।
এ বিষয়ে বেলাবো কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম ড. মৌলানা খলিলুর রহমান খান কড়া আপত্তি জানিয়েছেন,, তিনি বলেন ” ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তারা প্রতারণা করে যাচ্ছে। বিপদগ্রস্ত, সমস্যা গ্রস্ত মানুষকে উদ্ধার করবে বলে তারা হাতিয়া নেয় মোটা অংকের টাকা। সরকারের উচিত এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।”
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আব্দুল করিম জানান যে, “এ বছর আমরা অনুষ্ঠান করতে বাধা দিয়েছি। তবে সরকারিভাবে মাজার উচ্ছেদের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।”
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানানো হচ্ছে, অবিলম্বে এই কথিত মাজারের নামে চলমান অনৈতিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মাজারটি বন্ধ করা হোক, যাতে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা ও সামাজিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
Leave a Reply