সম্পাদকীয়:
বিগত ১৭ বছর ধরে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম করেছে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তাদের জনপ্রিয়তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, বরং অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ২৫০-এর বেশি আসনে জয়ী হতে পারে। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে, দলটি এখন এক অদ্ভুত সংকটের মধ্যে রয়েছে।
একদিকে তারা নিজেদের “ক্লিন ইমেজ” ধরে রাখতে চায়, অন্যদিকে দলের একনিষ্ঠ, পরীক্ষিত রাজপথের নেতাদের একের পর এক বহিষ্কার করা হচ্ছে অভিযোগ উঠলেই—দোষী সাব্যস্ত হোক বা না হোক। এ যেন এক অদ্ভুত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। প্রতিপক্ষ এবং দলের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই এই বহিষ্কারের ফায়দা লুটছে। ফলে বিএনপির রাজপথের শক্তি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বিএনপি দেখাতে চায়, তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর, দলে কোনো অপ্রীতিকর ব্যক্তিকে প্রশ্রয় দেয় না। নিঃসন্দেহে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া উচিত, তবে তড়িঘড়ি বহিষ্কার নীতি কতটা কার্যকর, সেটিও ভেবে দেখার বিষয়। কারণ এতে দলের ভেতর কোন্দল সৃষ্টি হচ্ছে, বহু নিবেদিত নেতাকর্মী আস্থাহীনতায় ভুগছে, এবং বিএনপির অবস্থা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।
একটা সময় বাংলা সিনেমায় দেখা যেত, মা বা প্রেমিকা নায়ককে প্রতিজ্ঞা করাতেন—সে কারও সঙ্গে মারপিট করবে না। কিন্তু খলনায়করা যখন তার ওপর হামলা করত, তখন মা বলতেন, “প্রতিবাদ করতে নিষেধ করিনি!” এরপর নায়ক শক্ত হাতে খলনায়কদের দমন করত। বিএনপিকেও মনে রাখতে হবে, আত্মরক্ষা ও প্রতিবাদ করা অপরিহার্য।
বর্তমান বাস্তবতায়, বিএনপি যদি প্রতিবাদহীন নীতিতে চলতে থাকে, তবে তারা আরও বেশি নির্যাতিত হবে। প্রতিপক্ষের আঘাত মোকাবিলা করতে না পারলে, পুলিশের দমন-পীড়ন ও প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রে দলটি ক্রমেই দুর্বল হতে থাকবে। যদি সময়মতো নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করা না যায়, তবে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠন একসময় “হিজড়া দলে” পরিণত হবে—যারা শুধু অভিযোগ করবে, কিন্তু লড়াই করতে পারবে না।
সুতরাং, বিএনপিকে এখনই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে। রাজপথের পরীক্ষিত কর্মীদের প্রতি সুবিচার করতে হবে, প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করতে হবে, কিন্তু শুধুমাত্র ক্লিন ইমেজ বজায় রাখার জন্য আত্মরক্ষার হাতিয়ার ফেলে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তা না হলে, একদিন বিএনপিই নিজেদের ভুল সিদ্ধান্তের বলি হবে।
Leave a Reply